---

আমাকে নিয়ে লিখা তোমার প্রথম চিঠি
সেই দিনের কথা কি মনে আছে তোমার?
পৃষ্ঠা জুড়ে কতগুলো বিক্ষিপ্ত বাক্যে
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটা কথাই লিখা ছিল-
“কাব্য,
তুমি আমার প্রথম প্রেম
প্রথম ভালবাসা
তোমার সাথে থাকব সারা জীবন
এই আমার মনের আশা।
তোমার পথপানে বসে থাকি সারাক্ষণ
তোমাকে ছাড়া এ জিবন বেঁচে থাকার নয়!
আমায় যখন পড়বে মনে
এই চিঠিখানা হাতে নিও
ভেবে নিও
আমি মিশে আছি তোমার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে।
ইতি
তোমারি কবিতা।”
তোমার কাঁচা হাতের লেখা চিঠি পড়তে পড়তে এক সময় দু চোখের কোনে চিক চিক করে জ্বল।
একবার, দু’বার, দশবার, শতবার পড়া যেন শেষই হয়না।
এ যেন এক অমৃত সুধা।
তাই মাঝে মধ্যে এখনও গেয়ে ওঠি-
‘এত সুখ পাইনি কখনো আমি, মাটিতে আজ স্বর্গ এসেছে নামি’।
আজ সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর থেকেই তোমাকে বড্ড মনে পড়ছে
আজকে ঘুম ভাঙ্গলো বড় এক চমকে।
এক জোড়া পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।
যে পাখিদের ডাক খুব একটা শুনিনি এদিকে।
কম্বল ছেড়ে দৌড়ে বাইরে গিয়ে দেখি-এক জোড়া স্কারলেট মিনিভেট এসে বসেছে আম গাছের মাথায়।
আমার ঘুম ভাঙ্গা নিয়ে পাখিরা- আহা রোজই যদি আসতো।
ড্রয়ার টানতে ডায়রির ভেতর তোমার চিঠিখানা
স্পর্শেই অনুভব আবেগ আর ভালোবাসার পরশ
চোখের সামনে ভেসে আসতে থাকে ফেলে আসা স্মৃতিগুলো
তোমার কি মনে পড়ে-
গ্রামের মাঝখান দিয়ে সেই সরু বাঁকা মেঠোপথ।
পথের দুপাশে দৃষ্টির শেষ সীমানায় বিস্তিতৃ সরিষা ফুলের সারি।
মৃদ হাওয়ায় দোল খাওয়া সরিষা মাঠকে মনে হচ্ছিল ঢেউ খেলা হলুদ সমুদ্র
সরিষা ফুলে ঘুরে বেড়ানো মধু পিয়াসী মৌমাছির গুণগুণ-গুঞ্জরণ
এমন আবেশে কে না হারিয়ে যেতে চায়!
তোমারে আমার যত ভাল লাগে,
সে অনুরাগে হলুদ বসন
বিছাইয়া আছে দিক দিগন্ত ভরে।
সরষে ক্ষেতের পরে আরো একটুকো এগিয়ে গেলেই নদী
সেই নদীর তীরে সবুজ কার্পেটে এক সঙ্গে বসে প্রকৃতির সান্নিধ্য
চাঁদের আলোয় ঢেউয়ের খেলায় যেমন থাকে একরাশ মায়া
তেমনি হৃদয়েও থাকে হাজারো অজানা কল্পনার মাধুর্য।
কখনো কৃত্রিম আবহে উড়তে থাকে তোমার চুল।
তোমার হাত ছুঁয়ে বন্দী হয় সময়।
স্পর্শে থাকে না যৌনতা! না থাকে মুগ্ধতা। সে স্পর্শে থাকে নির্ভরশীলতা। তোমার কাজল চোখ।
আমার নির্লিপ্ত কাব্যিক দৃষ্টি হারানোর ভয়। সে ভয়ে চোখ ভিজে যায়। শক্ত করে ধরে থাকি তোমার হাত।